কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বরুলিয়া খালের খননকাজ এখন শেষের দিকে। এতে করে হাওরের ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি সেচের সুবিধায় এসেছে।ইতিমধ্যে খননের আওতায় আসা জমিতে ধানের চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। খালের কারণে জমিতে সেচসহ নৌকায় করে সার আনতে এবং ধান কেটে হাওরে পানি আসার আগেই ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এর ফলে চলতি মৌসুমে কমে আসবে ধান উৎপাদনের বাড়তি খরচ ও পরিশ্রম। তাই খুশি এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর-অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার জোয়ানশাহী হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বরুলিয়া খাল। হাওরের খরস্রোতা নদী ঘোড়াউত্রা থেকে এ খালের উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থলসহ খালের প্রায় পুরোটাই পলি জমে ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ ছিল বরুলিয়া খালের। বর্ষাকাল শেষে হাওরের পানি নেমে গেলে এই অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো ধানের আবাদ করেন। বহু বছর ধরে দিগন্তবিস্তৃত এ হাওরে বোরো আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, সার-বীজ ও ধান পরিবহনের জন্য যোগাযোগব্যবস্থার দুর্ভোগে পড়েন কৃষকেরা। পাশাপাশি সেচের অভাবে পতিত থাকে কয়েক হাজার হেক্টর জমি। তবে চলতি বছর এই হাওরের সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বরুলিয়া খালটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে খননকাজ হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ অংশের খনন শেষ হয়েছে। খনন করা অংশে হচ্ছে ধান চাষ। দীর্ঘদিন ভরাট হয়ে পড়ে থাকা খালে সম্প্রতি পানির প্রবাহ দেখে কৃষকের চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
২৯টি প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে গত বছরের ডিসেম্বরে বরুলিয়া খালের খননকাজ শুরু হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের মে মাসে।
নিকলী জোয়ানশাহী হাওরের বোরোচাষি কলিমুদ্দিন বলেন, ‘এ হাওর এলাকায় পানির স্তর খুবই নিচে। তাই গভীর নলকূপ বসিয়েও আমরা জমিতে পানি দিতে পারি না। এ কারণে বছরের পর বছর আমাদের জমি পতিত থাকে। এবার খালের খননকাজ শুরু হয়েছে বোরো ধান আবাদের আগেই। তাই ভরসা পেয়ে জমি চাষ করে ধান রোপণ করেছি। আমার মতো সব কৃষকই ধান আবাদ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে খালে পানিপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে মনের জোর আরও বেড়ে গেছে। জমিতে সেচসহ খাল দিয়ে নৌকায় করে সার আনতে সুবিধা হবে। ধান কেটে হাওরে পানি আসার আগেই নৌকা দিয়ে ধান নিয়ে বাড়ি যেতে পারব।’
নিকলী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার প্রয়াত বাবা কারার বুরহান উদ্দিন বহু বছর নিকলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল এই বরুলিয়া খাল খনন করা। বর্তমানে খালটি খনন হচ্ছে, তবে বাবা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ খাল খনন করার কারণে প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলের কৃষিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।’
কিশোরগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘খালের খননকাজ ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত মেয়াদের আগেই সম্পূর্ণ খননকাজ শেষ হবে। পানিপ্রবাহ পুরোদমে শুরু হলে এর সুফল পাবেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।’
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস